পরিমাপের পর্যায়সমূহ আলোচনা কর

পরিমাপের পর্যায়সমূহ আলোচনা কর

পরিমাপের পর্যায়সমূহ আলোচনা কর


ভূমিকাঃ

সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান বহন করে তন্মধ্যে একটি হলো পরিমাপ। গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ এবং তার বিশ্লেষণ করে বাস্তবসম্মত প্রতিবেদন তৈরিতে এবং তার বিশ্লেষণ করে বাস্তবসম্মত প্রতিবেদন তৈরিতে পরিমাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্দিষ্ট একটি রীতিতে বস্তু, অবস্থা, ব্যবস্থাকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রক্রিয়াই হলো পরিমাপ। এটি মূলত একটি গাণিতিক ধারণা।

 

 পরিমাপের পর্যায়সমূহ:

সামাজিক বিষয়াদির পরিমাপ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিষয়াদির মতো সহজসরল নয়। কারণ এর অধিকাংশ বিষয়ই জ্ঞানাত্মক প্রকৃতির। যেমন- শত্রুতা, ক্ষমতা, মনোভাব ইত্যাদি। তাই গবেষকগণকে এর বিশ্লেষণের জন্য ৪টি পর্যায়ের সাহায্য নিতে হয়। এগুলো উদ্ভাবন করেছেন এস. এস. স্টিভেন্স (S. S. Stevens)। তার ৪টি  পর্যায় নিম্নরুপঃ

 

১. নামসূচক স্কেল:

নামসূচক স্কেলটি হলো নামকরণ প্রক্রিয়া। যেখানে বিভিন্ন বিষয়, বস্তুত, ঘটনাকে নামের অনুসারে শ্রেণিকরণ করা হয়। সি. আর. কোঠারির মতে, নামসূচক স্কেল সাধারণভাবে একটি পদ্ধতি যাতে সংখ্যার প্রতীকসমূহকে নির্দিষ্ট করার জন্য। লেবেল প্রদান করা হয়। মূলত নামসূচক স্কেলে লেবেল ব্যবহার করে ব্যক্তি বা বস্তুর শ্রেণিকরণ করে পরিমাপ করা হয়। যেমন- ধর্ম ।

নামসূচক স্কেলের বৈশিষ্ট্য:

১. এটি একটি নামকরণ প্রক্রিয়া;

২. এটি পরিমাপের দুর্বলতম প্রক্রিয়া;

৩. লেবেলকরণে সমান একক ধরা হয় না:

৪. এটি অতি সহজসরল এবং বহুলব্যবহৃত।

 

২. ক্রমসূচক স্কেল:

সমাজবিজ্ঞানীরা অনেক ধরনের চলক নিয়ে অধ্যয়ন করেন, সেগুলোকে নামসূচক স্কেল দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়। কোনো বিষয় অথবা প্রপঞ্চকে ক্রমানুসারে সাজানো হলে তাকে ক্রমসূচক স্কেল বলা হয়। নিম্নের ছকে একটি ক্রমসূচক স্কেলের স্বরূপ তুলে ধরা হলো:

 

ক্রমসূচক স্কেলের বৈশিষ্ট্য:

১. ক্রমস্কেলে বস্তু বা অবস্থাকে নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে সাজানো হয়।

২. এ পরিমাপের নির্দিষ্ট কোনো একক নেই।

৩. এখানে পরম শূন্য বলতে কিছুই নেই।

৪. পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে বস্তুর তুলনা করা হয়।

 

৩. ব্যাপ্তিসূচক স্কেল:

পরিমাপের যে স্কেল দ্বারা দুটি বিষয়ের মধ্যকার দূরত্ব নির্দেশ করা হয় তাকে ব্যাপ্তিসূচক স্কেল বলা হয়। পদার্থবিজ্ঞানের থার্মোমিটার হলো এই স্কেলের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ।

 

ব্যাপ্তিসূচক স্কেলের বৈশিষ্ট্য:

১. এটি একটি ক্রমিক মাপনি।

২. এখানে দুটি ক্রমের দূরত্ব জানা থাকে।

৩.এটি একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিমাপ।

৪। এখানে পরম শূন্য থাকে না কিন্তু কাল্পনিক শূন্য থাকে।

 

৪. অনুপাতসূচক স্কেল:

শূন্যকে একক হিসেবে গ্রহণ করে যে স্কেলের পরিমাপ করা হয় তাই অনুপাতসূচক স্কেল। এ স্কেলে এককগুলোর ব্যবধানকে অনুপাতিক হারে প্রকাশ করা হয়। এটি পরিমাপ স্কেলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

 

অনুপাতসূচক স্কেলের বৈশিষ্ট্য:

১. এটি বিজ্ঞানভিত্তিক পরিমাপ স্কেল;

২. গবেষককে সঠিক অনুপাত বের করতে সহায়তা করে।

৩. এখানে একটি পরম শূন্যের অবস্থিতি রয়েছে;

৪. সামাজিক বিজ্ঞানে প্রপঞ্চ বিশ্লেষণে কম ব্যবহৃত হয়;

৫. এ পরিমাপে সকল ধরনের পরিসংখ্যাণগত পরিমাপ প্রযোজ্য হয়।

 

এ স্কেল দ্বারা জন্মহার, মৃত্যুহার, বয়স, লিঙ্গানুপাত ইত্যাদি পরিমাপ করা যায়। যেমন- মাসুম মিতুলের চেয়ে দুইগুণ বড়। এ স্কেল দিয়ে কোনোকিছুর ওজন বা ভর পরিমাপ করা যায়। যেমন- কোনো বস্তুর ওজন হতে পারে। এছাড়াও এ স্কেল দ্বারা দৈর্ঘ্য, সময়, উচ্চতা, অর্থমূল্য, লাভের হার ইত্যাদি পরিমাপ করা সম্ভব।

 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পরিমাপ সমাজ গবেষণার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্ন বিষয় গবেষণার জন্য বিভিন্ন পরিমাপক স্কেল ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট স্কেল হলো অনুপাতসূচক স্কেল।

Post a Comment

Previous Post Next Post