ভূমিকা:
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। দীর্ঘ একশ বছরের কোম্পানি শাসন ও শোষণের ফলে বঞ্চিত মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল এ বিদ্রোহে। ব্যারাকপুরে এ বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটলেও পরবর্তীতে সমগ্র ভারতবর্ষে এ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল। যথাযথ পরিকল্পনা ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এ বিদ্রোহ সফল হতে পারেনি। কিন্তু ভারতীয়দের মনে জাতীয়তাবাদের চেতনা সখ্যার করে পরবর্ত আন্দোলনে এ বিদ্রোহ অনুঘটকের কাজ করে।
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রেহের কারণ: নিম্নে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের কারণ আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক কারণ: নিম্নে ১৮৫৭ সালে সংঘটিত মহাবিদ্রোহের সামাজিক কারণসমূহ বর্ণিত হলো :
ক. মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ:
মুসলমানগণ বিভিন্নভাবে সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত হয়। এছাড়া মুসলমানগণ জমিদার, লাখেরাজ, ওয়াকফ এমনকি অফিস আদালত থেকে বিতাড়িত হয়ে অশিক্ষিত ও দরিদ্র কৃষকে পরিণত হয়। ইংরেজরা মুসলমানদের দমন করার জন্য তাদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। ফলে মুসলমানরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
খ. ভারতীয়দের প্রতি দুর্ব্যবহার:
ব্রিটিশরা ভারতীয়দের প্রতি সর্বদা ঘৃণার মনোভাব পোষণ করতো। ইংরেজরা সবসময় ভারতীয়দের স্পর্শ বর্জন করে চলত। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়ে ওঠে
গ. উচ্চপদে ভারতীয়দের নিযুক্ত না করা:
২. রাজনৈতিক কারণ: নিম্নে ১৮৫৭ সালে সংঘটিত মহাবিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণসমূহ বর্ণিত হলো :
ক. স্বত্ববিলোপ নীতি:
লর্ড ডালহৌসির স্বত্ববিলোপ নীতির ফলে দেশীয় রাজন্যবর্গের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং তাদের মনে ব্রিটিশদের প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হয়। এ নীতির ফলে সাতারা, নাগপুর, ঝাঁসি, সম্বলপুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। ইংরেজরা স্বত্ববিলোপ নীতি প্রবর্তন করে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের নবাবদের ভাতা বন্ধ করে দেয়। এমনকি তারা কুশাসনের অজুহাত দিয়ে অযোধ্যা রাজ্যটিও দখল করে নেয় । ইংরেজদের এ বৈষম্যমূলক নীতির ফলে জনমনে অসন্তুষ্টি দেখা দেয় ।
খ. আশ্রিত রাজ্য ও উপজাতিদের বিদ্রোহী মনোভাব:
ভারতের আশ্রিত রাজ্যগুলোর মধ্যেও অনেক অসন্তুষ্টি ছিল। অনেক আশ্রিত রাজ্যে বিপ্লবের অনেক পূর্বেই সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাব জেগে ওঠে। এদের মধ্যে ত্রিবাঙ্কুরের দেওয়ান ও রাজপুতনা অঞ্চল অন্যতম। এসব এলাকাতে ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের অনেক পূর্বেই একাধিক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় । ভারতের আদিম উপজাতিগুলো বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশবিরোধী হয়ে ওঠে।
গ. নাগপুর ও অযোধ্যা দখল:
লর্ড ডালহৌসি নাগপুরের রাজপ্রাসাদ ও অযোধ্যার নবাবের প্রাসাদ লুণ্ঠন করেন। মণিমুক্তা, স্বর্ণালংকার, এমনকি হাতিঘোড়া পর্যন্ত লুণ্ঠন করা হয়েছিল। অযোধ্যার নবাব সবসময় ব্রিটিশদের প্রতি অনুগত ছিল। তদানীন্তন ভারতবর্ষের দেশীয় রাজন্যবর্গের মধ্যে এ ঘটনা দারুণ বিক্ষোভ ও সন্দেহের সৃষ্টি করে। নবাব পরিবারের লোকজনকে অযোধ্যার নবাবের প্রাসাদ হতে বলপূর্বক বের করে দিয়ে নবাবের কোষাগার লুণ্ঠন করা হয় । অযোধ্যার এরূপ বহু পরিবার ব্রিটিশ অধিকারের পর অর্থ সাহায্যের অভাবে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অসংখ্য জমিদার তাদের জমিদারি হারিয়ে ফেলে । ফলে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ।
৩. অর্থনৈতিক কারণ: নিম্নে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের অর্থনৈতিক কারণসমূহ বর্ণিত হলো:
ক. ভূমিসংস্কার নীতি:
ব্রিটিশদের ভূমিসংস্কার নীতির ফলে অনেক জমিদার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। সাধারণ জনগণের ভূমির ওপর কোনো অধিকার ছিল না। অধিকন্তু নব্য জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
খ. ব্রিটিশদের অর্থ পাচার:
ব্রিটিশ শাসনের গোড়াপত্তনের সময় হতে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় একশত বছর ধরে ইংরেজগণ যে পরিমাণ সোনা, রুপা, মূল্যবান ধাতু ভারতবর্ষ হতে নিয়ে যায় তার অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে ব্রিটিশ অধিকৃত রাজ্যের প্রজাবর্গের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রজাবর্গ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
গ. জনগণের আর্থিক দুরবস্থা:
ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের ফলে দেশীয় ব্যক্তিবর্গের জীবিকার্জনের পথ ক্রমে লোপ পেয়েছিল। কর বৃদ্ধি, অর্পিত কর আদায়, যানবাহনের কর স্থাপন প্রভৃতি জনসাধারণের দুর্দশা বৃদ্ধি করে। ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যেও এসব আর্থিক কারণে দারুণ অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
৪. সামরিক কারণ: নিম্নে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সামরিক কারণসমূহ বর্ণিত হলো :
ক. পদোন্নতিতে বৈষম্য :
সেনাবাহিনীর মধ্যে ইংরেজ সিপাহি ও কর্মচারীরা অনভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও উচ্চপদে আসীন হতো। অথচ দেশীয় সিপাহির যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তারা পদবঞ্চিত ছিল। ভারতীয় অফিসার ও সিপাহিদের পদোন্নতির কোনোই আশা ছিল না। এ বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য ভারতীয় সিপাহিরা বিদ্রোহ করে।
খ. বৈষম্যমূলক আচরণ:
ইংরেজগণ প্রধানত দেশীয় সিপাহিদের সাহায্যেই ভারতবর্ষে এক বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য জয় করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সাম্রাজ্য জয়ে সাহায্যের বিনিময়ে দেশীয় সিপাহিরা কোনো প্রকার আর্থিক সুযোগ সুবিধা পায়নি। উপরন্তু তাদের বেতন ব্রিটিশ সৈনিকদের তুলনায় এতই কম ছিল যে, এ বৈষম্যমূলক ব্যবহারে তারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হয়। ইংরেজ সিপাহিরা দেশীয় সিপাহিদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেতন পেত। দূরবর্তী স্থানে অবস্থানের ক্ষেত্রে ইংরেজ সিপাহিরা ভাতা পেলেও দেশীয় সিপাহিরা সেই ভাতা পেত না। এ বৈষম্যমূলক আচরণ দেশীয় সিপাহিদের বিদ্রোহী করে তোলে।
৫. ধর্মীয় কারণ:
খ্রিস্টান মিশনারি কর্তৃক হিন্দু ও মুসলমানদের প্রকাশ্যে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়। জেলখানার কয়েদিদের নিকট খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার প্রস্তাব ভারতের হিন্দু ও মুসলমানগণ সহজে মেনে নেয়নি। লর্ড ক্যানিং উপমহাদেশের লোকদের ধর্মান্তরিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় । ফলে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
৬. এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহারঃ
এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার ছিল ঊনবিংশ
শতাব্দীতে ব্রিটিশ সমরাস্ত্রে এক নতুন সংযোজন। এ রাইফেলের কার্তুজে গরু ও শূকরের
চর্বি ব্যবহার ভারতীয় হিন্দু ও মুসলিম সিপাহিদের নিকট ধর্ম অবমাননার শামিল ছিল।
ফলে ভারতীয় সিপাহিরা এ রাইফেল ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ।
এনফিল্ড রাইফেল: নিম্নে এনফিল্ড রাইফেল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. উদ্ভব : উইলিয়াম এলিস মেটফোল্ড ১৮৫৩ সালে উন্নতমানের এনফিল্ড রাইফেলের প্রচলন করেন। এ রাইফেলের মডেল ছিল ৫৫৭ ক্যালিবার এনফিল্ড।
২. ওজন : এনফিল্ড রাইফেলের ওজন ছিল ৪.১৯ কেজি ।
৩. দৈর্ঘ্য : এ রাইফেলের দৈর্ঘ্য ছিল ১২৬০ মিলিমিটার।
৪. কার্তুজ : এনফিল্ড রাইফেলে যে কার্তুজ ব্যবহার করা হতো সেটি তৈরি হতো গরু ও শূকরের চর্বি দ্বারা। এ কার্তুজ দাঁত দিয়ে কেটে বন্দুকে ভরতে হতো ।
৫. সিপাহি বিদ্রোহে এনফিল্ড রাইফেল :
এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজে গরু ও শূকরের চর্বি ব্যবহার করা হতো এবং তা দাঁত দিয়ে কেটে রাইফেলে ঢুকাতে হতো। গরু এবং শূকরের চর্বি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে নিষিদ্ধ ছিল। এ কার্তুজ ব্যবহার হিন্দু ও মুসলিম সিপাহিদের নিকট ধর্ম অবমাননার শামিল ছিল। বিধর্মী হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভারতীয় সৈন্যরা এ রাইফেল ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরে প্রথমে বিদ্রোহের সূচনা হয় । ঐদিন মঙ্গল পাণ্ডে নামে এক ব্রাহ্মণ সিপাহি এ রাইফেল ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং উত্তেজিত হয়ে তার ঊর্ধ্বতন দুজন সামরিক অফিসারকে হত্যা করে। সেই সাথে অন্য ভারতীয় সিপাহিরাও প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করলে এ বিদ্রোহ দাবানলের মতো ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ইংরেজদের দীর্ঘদিনের শাসন ও শোষণ সিপাহি বিদ্রোহের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার এ বিদ্রোহকে আরো উসকে দেয় । তাই বলা যায়, এনফিল্ড রাইফেলের ব্যবহার ছিল সিপাহি বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ।
মহাবিদ্রোহের ফলাফল: নিম্নে মহাবিদ্রোহের ফলাফল তুলে ধরা হলো:
১. ভারতবর্ষের প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলন:
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষের সনাতনী পন্থায় পরিচালিত প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম। এ বিদ্রোহ ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদ বিকাশে এক মহিমান্বিত অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। সিপাহি বিদ্রোহের ফলে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়।
২. ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসনের অবসান:
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, ভারতবর্ষের মতো এত বড় একটি দেশ কোম্পানির হাতে রাখা অসংগত । অতএব ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত শাসন আইন পাস করে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটান ।
৩. রানির শাসন জারি :
১৮৫৭ সালে সংঘটিত মহাবিদ্রোহের পর ইংল্যান্ডের রানি ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরাসরি রানির শাসন চালু করেন। ভারতে শাসন পরিচালনার জন্য ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের মহারানি এক ঘোষণাপত্র জারি করেন; যা 'Act for the Better Government of India' নামে পরিচিত
৪. সামরিক নীতির পরিবর্তন :
১৮৫৭ সালে সিপাহিরা মহাবিদ্রোহ করলে এটি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে এ রকম বিদ্রোহ দমন করার জন্য ব্রিটিশরা সামরিক নীতির পরিবর্তন করে। এ লক্ষ্যে তারা সেনাবাহিনীতে বেঙ্গল আর্মির পরিবর্তে ভারতীয়দের মধ্য থেকে সিপাহি নিয়োগ দেয় । ইংরেজ সৈন্য বৃদ্ধিসহ গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয় সৈন্যদের নিষিদ্ধ করা হয়।
৫. মুঘল শাসনের অবসান :
১৮৫৭ সালে সিপাহিরা মহাবিদ্রোহ করলে শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ তাদের সমর্থন প্রদান করেন। সিপাহিদের সমর্থন দানের জন্য ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ইয়াঙ্গুনে নির্বাসনে প্রেরণের মাধ্যমে মূলত ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুঘল শাসনের অবসান ঘটানো হয় ।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন বলার কারণ:
বিদ্রোহ ও বিপ্লবের মধ্যকার পার্থক্য:
বিদ্রোহ ও বিপ্লব মূলত আন্দোলন অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অধিকার আদায়ের নিমিত্তে যাবতীয় সংগ্রাম পরিচালনাই বিদ্রোহ ও বিপ্লব। বিদ্রোহ ও বিপ্লব আন্দোলনের অর্থ প্রকাশ করলেও বিদ্রোহ মূলত ক্ষুদ্র অর্থে প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনে জনসমষ্টির আন্দোলনকে বোঝায়। অপরদিকে বিপ্লব হলো প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন ।
বিদ্রোহ ও বিপ্লব শব্দ দুইটি প্রচলিত পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলেও এগুলোর মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।
প্রথমত, বিদ্রোহ বলতে বোঝায় প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে বিরোধী জনসমষ্টির আন্দোলন । বিদ্রোহ স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। বিদ্রোহ ব্যক্তিগত হতে পারে। বিদ্রোহ সফল হলে পূর্বতন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে, ব্যর্থ হলে বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় ধীরগতি হলেও ঘটতে থাকে সূক্ষ বা স্থূল পরিবর্তন। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের সংঘটিত রংপুর বিদ্রোহ, পাবনা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ প্রভৃতি হলো বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
দ্বিতীয়ত, বিদ্রোহ বলতে কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একাংশের সংগ্রামকেও বোঝায়। বিভিন্ন সময়ে সামরিক অভ্যুত্থান বা বিদ্রোহ ঘটেছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সিপাহীদের বিদ্রোহ। ১৯৪৬ সালে ভারতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবিদ্রোহকে চিহ্নিত করা যেত পারে। বিপ্লব বলতে বোঝায় প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন। বিপ্লবের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আঠারো শতকে ইউরোপের শিল্প বিপ্লব বা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব। কারণ শিল্প বিপ্লবের ধারা ইউরোপের শিল্প ব্যবস্থার এবং ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা ফ্রান্সের পূর্বতম সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত ও আমূল পরিবর্তন ঘটে।
অতএব বলা যায় যে, বিদ্রোহ ও বিপ্লব
শব্দগতভাবে এক হলেও, অর্থগতভাবে এর বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান ৷ বিদ্রোহের মাধ্যমে
প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন কখনো কখনো ব্যর্থ হয়। কিন্তু বিপ্লব তখনি বলা
যায়, যখন তা সফলতায় পরিণত হয় এবং আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় ।
১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন বলার কারণ:
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সিপাহি বিদ্রোহ না ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম ছিল সেটি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক এটিকে ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম আবার অনেকে এটিকে শুধু সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ভারতীয়দের সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে। তাই এটিকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে উল্লেখ করা যুক্তিযুক্ত। এ ব্যাপারে নিম্নে মনীষীদের মতামত উল্লেখ করা হলো:
১. রজনীকান্ত গুপ্ত তার ‘সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস' গ্রন্থে স্বীকার করেছেন যে, সিপাহিরা জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ইংরেজ শাসনের অবসান চেয়েছিল।
২. ঐতিহাসিক শশীভূষণ চৌধুরী তার 'Civil Rebellion in the India Mutinies' গ্রন্থে ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় যুদ্ধ বলে ক্ষান্ত হননি । তিনি এ বিদ্রোহকে একটি গণবিদ্রোহ বলে বর্ণনা করেছেন।
৩. ইংরেজ লেখক জে.বি. নটন তার Topics for Indian Statesman' গ্রন্থে প্রথম লিখেছেন ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ একটি সামান্য সিপাহি বিদ্রোহ ছিল না। এ অভ্যুত্থান একটি গণবিদ্রোহে রূপ নিয়েছিল I
৪. জে. বি. নর্টনের বক্তব্যের সাথে ডাফ কায়ে, বল ম্যালেসন প্রমুখ ইংরেজ লেখকও একমত পোষণ করেছেন এবং তারা এ বিদ্রোহে ইংরেজদের ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত কারার একটি সংঘটিত প্রয়াস দেখতে পেয়েছেন ।
৫. কার্ল মার্কস এটিকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহকে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন এ বিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এর মাধ্যমেই ভারতবর্ষে প্রথম হিন্দু মুসলিম একত্রে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলে এবং সর্বপ্রথম ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখায় । এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে পরবর্তীতে ভারতবর্ষ ইংরেজদের নিকট থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রভাব:
নিম্নে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের প্রভাব আলোচনা করা হলো:
১. ভারতবর্ষের প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম:
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষের সনাতনী পন্থায় পরিচালিত প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম। এ বিদ্রোহ ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদ বিকাশে এক মহিমান্বিত অধ্যায় সৃষ্টি করেছিল। সিপাহি বিদ্রোহের ফলে ভারতবর্ষে আধুনিক জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল । সিপাহি বিদ্রোহের ফলে ভারতীয়দের মনে যে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের উদ্ভব, ঘটেছিল সেটি পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যদিও ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ উপযুক্ত পরিবেশ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবে সফল হতে পারেনি। এ বিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও ভারতবাসীর মধ্যে যে জাতীয়তাবাদী চেতনার বীজ বপন করেছিল সেটি পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ঐতিহাসিক জিফিনের মতে, “১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পূর্বে ভারতের পক্ষে মঙ্গলময় এরূপ ঘটনা কখনও ঘটেনি।
২. ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসনের অবসান:
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারে যে, ভারতবর্ষের মতো এত বড় একটি দেশ কোম্পানির হাতে রাখা অসংগত। অতএব ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত শাসন আইন পাস করে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটায়। ভারতবর্ষে কোম্পানি শাসন বিলুপ্ত করে সরাসরি রানির শাসন চালু করা হয় । ভারত শাসন আইন পাস করে রানিকে সাহায্য করার জন্য একজন ভারত সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়। ভারত শাসন করার জন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কাউন্সিল গঠন করা হয়। ভারতের বড় লাট 'Govornor General Viceroy' নামে অভিহিত হন । প্রথম ভাইসরয় হিসেবে ‘লর্ড ক্যানিংকে' নিযুক্ত করা হয় ।
৩. রানির শাসন জারি:
১৮৫৭ সালে সংঘটিত মহাবিদ্রোহের পর ইংল্যান্ডের রানি ভারতবর্ষে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরাসরি রানির শাসন চালু করেন। ভারতে শাসন পরিচালনার জন্য ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের মহারানি এক ঘোষণাপত্র জারি করেন যা 'Act for the Better Government of India' নামে অভিহিত। ভারত শাসন করার জন্য রানি যে ঘোষণাপত্র জারি করেন তাতে নিম্নে বর্ণিত বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হয় ।
ক. ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক
স্বত্ববিলোপ নীতি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় ।
খ. ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যেসব
ভারতীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।
গ. ব্রিটিশ সরকার রাজ্যবিস্তার নীতি
পরিহার করবে।
ঘ. যোগ্যতা অনুযায়ী সব ভারতীয়কে
সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে ।
ঙ. ভারতীয়দের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হয় ।
৪. সামরিক নীতির পরিবর্তন:
১৮৫৭ সালে সিপাহিরা মহাবিদ্রোহ করলে এটি থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে এ রকম বিদ্রোহ দমন করার জন্য ব্রিটিশরা তাদের সামরিক নীতির পরিবর্তন করে। তারা পরবর্তীতে বিদ্রোহ দমন করার জন্য সেনাবাহিনীতে বেঙ্গল আর্মির পরিবর্তে ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে সিপাহি নিয়োগ দেয় । ইংরেজরা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেনাবাহিনীতে দেশীয় সৈন্যের পরিবর্তে ইংরেজ সৈন্য বৃদ্ধি করে । ইংরেজ সৈন্য বৃদ্ধিসহ গোলন্দাজ বাহিনীতে দেশীয় সৈন্যদের নিষিদ্ধ করা হয়। তাছাড়া ব্রিটিশরা দেশীয় সৈন্যদের নিম্নমানের অস্ত্র প্রদানের পাশাপাশি ইউরোপীয়দের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দেয় ৷
৫. ভারতে মুঘল শাসনের অবসান:
১৮৫৭ সালে সিপাহিরা মহাবিদ্রোহ করলে শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ তাদের সমর্থন প্রদান করেন। সিপাহিদের সমর্থন দানের জন্য ব্রিটিশরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ইয়াঙ্গুনে নির্বাসনে প্রেরণ করেন। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে নির্বাসনে প্রেরণের মাধ্যমে মূলত ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুঘল শাসনের অবসান হয় ।
৬. বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া:
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ফলে ভারতবর্ষে বিশেষত বাংলায় এক মহাজাগরণ জন্ম নিয়েছিল। ১৮৫৭ সালের মহবিদ্রোহকে বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহল বিভিন্নভাবে চিত্রায়িত করেছেন। কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী একে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন আবার অনেকে একে বিদ্রোহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। নিম্নে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ সম্পর্কে বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
ক. ঐতিহাসিক শশীভূষণ চৌধুরী তার 'Civil Rebellion in the Indian Mutinies' গ্রন্থে ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় যুদ্ধ বলে ক্ষান্তই হননি। তিনি এ বিদ্রোহকে একটি গণবিদ্রোহ বলে বর্ণনা করেছেন।
খ. রজনীকান্ত গুপ্ত তার ‘সিপাহি যুদ্ধের ইতিহাস' গ্রন্থে স্বীকার করেছেন যে, সিপাহিরা জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ইংরেজ শাসনের অবসান চেয়েছিল।
গ. বীর সাভারকারও ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানকে একটি জাতীয় যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ।
ঘ. ড. আর.সি. মজুমদার তার 'The Sepahy Mutiny and the Revolt of 1857' গ্রন্থে উল্লেখ করেন “এ বিদ্রোহ প্রথমে সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবেই শুরু হয়। কিন্তু পরে কোনো কোনো অঞ্চলে এটি ব্যাপক প্রসার লাভ করে জাতীয় আন্দোলনে রূপলাভ করে।”
চ. ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন 'Eighteen Fifty Seven' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ প্রথম সিপাহিদের মধ্যে আরম্ভ হলেও সকল স্থানে এটি কেবল সিপাহিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।”
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ:
ইংরেজরা প্রথমে বেসামাল হয়ে পড়লেও ব্যারাকপুর ও মিরাটের বিদ্রোহ দমনের পর অন্যান্য বিদ্রোহও দমনে সক্ষম হয়। এতে ভারতীয়দের ব্যর্থতার কারণসমূহ নিম্নরূপ:
১. ভারতের স্বাধীন রাজ্যগুলো সিপাহিদের সহযোগিতা করেনি ।
২. প্রশিক্ষণ ও সমরাস্ত্রে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের তুলনায় অত্যন্ত দুর্বল ছিল ।
৩. সেনাবাহিনীতে ব্রিটিশরাই যোগাযোগ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক হওয়ায় ভারতীয় সৈন্যরা বিপ্লবকালে যোগাযোগ সমন্বয়হীনতা ও অসুবিধার সম্মুখীন হয় ।
৪. সাধারণ জনগণ ততটা উৎসাহিত ছিল না এবং তারা বিপ্লবে অংশগ্রহণও করেনি ।
৫. হিন্দু মধ্যবিত্ত বিশেষ করে শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত সিপাহি বিপ্লবে সমর্থন জানায় ।
৬. আর. সি. মজুমদার বলেন, "The most important among these was the lack of a general plan or central organization guiding the whole movement." (The Sepahy Muting and the Revolt of 1857, P-474)
৭. বিপ্লবের কার্যপন্থা, সময় প্রভৃতি সম্পর্কে উপযুক্ত যোগাযোগ বা সংহতি ছিল না। ফলে যেমন একই সময়ে সমগ্র জায়গায় বিপ্লব শুরু হয়নি, তেমনি একই নীতি বা কর্মপন্থা সর্বত্র অনুসৃত হয়নি ।
৮. নানাসাহেব ও বাহাদুর শাহের মধ্যে স্বার্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ।
৯. ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন দেখা দেওয়ার ফলে তা আঞ্চলিক সীমার মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ ছিল ।
১০. ব্যাপক বিদ্রোহ পরিচালনার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা বিপ্লবী নেতৃবর্গের ছিল না ।
১১. আন্দোলনে পরাজয়ের কারণগুলোর
মধ্যে অন্যতম ছিল ব্রিটিশ কূটকৌশল। তারা ভীতি প্রদর্শন করে এবং প্রয়োজনবোধে
পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে অনেককেই তাদের পক্ষে ভিড়াতে সক্ষম হয় ।
অতএব বলা যায় যে, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র, মহাবিদ্রোহ। এ বিদ্রোহে ব্যাপক জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও সঠিক কর্মপরিকল্পনা, যোগত্যা ও নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সফল হতে পারেনি। তাছাড়া শত্রুপক্ষের রাজনৈতিক সংগঠন ও সামরিক দক্ষতা সম্পর্কে বিদ্রোহীদের সঠিক ধারণা না থাকার কারণে সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
উপসংহার:
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা
যায় যে, ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের ইতিহাসে একটি
যুগান্তকারী ঘটনা। এ বিদ্রোহের মাধ্যমে ভারতীয়রা সর্বপ্রথম ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখায়। যথাযথ পরিকল্পনা ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এ বিদ্রোহ
ব্যর্থ হলেও এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে পরবর্তীতে ভারতবর্ষ ইংরেজদের নিকট থেকে
স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।